নিজস্ব প্রতিনিধি, পটুয়াখালী
পটুয়াখালীতে ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে সেই জোড়া লাগা জমজ শিশুর অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না দরিদ্র পিতা বশির সিকদার ও মাতা রেখা বেগম।
সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে গত ২৮শে ফেব্রুয়ারি-২০২১ ইং রোববার দুপুরের দিকে জোড়া লাগা অবস্থায় জমজ শিশুর জন্ম দেন রেখা বেগম (১৮) । প্রসূতি বর্তমানে সুস্থ থাকলেও জোড়া লাগা জমজ শিশুদের স্ক্যানুতে রাখা হয়েছে।
যমজ দুই শিশুর উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন যা পটুয়াখালীতে সম্ভব না। যমজ শিশুর জন্মগ্রহণের পরই দুঃশ্চিন্তায় পড়েন বাবা-মা। যমজ দুই শিশুর পেটের নিচ থেকে জোড়া লাগানো, শিশু দুইটির হাত, পা ও হৃদপিণ্ড আলাদা। তবে তাদের প্রস্রাব ও পায়খানার রাস্তা নেই। জটিল চিকিৎসার ব্যয়ভার আর অস্ত্রপাচারের জটিলতা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। ঢাকা নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হলেও আর্থিক সঙ্গতি না থাকায় রাজী হননি পিতা বশির সিকদার।
শিশুর বাবা বশির সিকদার জানান, অর্থাভাবে আমার শিশুর উন্নত চিকিৎসা করাতে পারছি না। ডাক্তার বলেছে চিকিৎসার জন্য ঢাকা নিয়ে যাওয়ার কথা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি একজন মা, আপনি একজন বোন, আপনি একজন সফল প্রধানমন্ত্রী। আমি আপনার কাছে সাহায্যে চাই যাতে আমার জোড়া লাগানো শিশু দুইটির চিকিৎসার ব্যবস্থা করে, জীবন বাঁচাতে আপনার কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি।
পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজের গাইনী বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডাক্তার জাকিয়া সুলতানা জানান, কনজয়েন্ট বেবী তাও আবার প্রিম্যাচিওর, মাত্র ৩২ সপ্তাহে এই জমজ বাচ্চা প্রসব করানো হয়েছে। তাদেরকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু আর্থিক সঙ্গতি না থাকায় অভিভাবক রাজী হননি। এই বাচ্চার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন যা পটুয়াখালীতে সম্ভব না।
একজন শিশু বিশেষজ্ঞ মতামত, দুটি কারনে জোড়া লাগা যমজ শিশুর জন্ম হয় প্রথম কারণ, জিনগত বা বংশগত কারণে অথবা ঔষধের কারণে। যমজ শিশু জন্ম নেয়ার একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে, বংশগত কারণ। পূর্ব-পুরুষদের কেউ যদি যমজ সন্তান জন্ম দেয়, তবে তা পরবর্তী প্রজন্মের যমজ সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
তিনি আরও বলেন, ঔষধের কারণে অনেক দম্পতি রয়েছেন, যাদের সন্তান নিতে না চাইলেও হয়ে যায়। এ সময় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে তারা বিভিন্ন ধরনের ওষুধ খেয়ে থাকেন। এতে ওই গর্ভবতীর সুস্থ বা অসুস্থ নবজাতকের জন্ম হতে পারে। শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর কারণে মায়ের দেহে সাধারণত একই সময়ে একটি মাত্র ডিম্বাণু দুটি ডিম্বাশয়ের যে কোনো একটি থেকে নির্গত হয়। যদি দুটি ডিম্বাশয় থেকেই একটি করে ডিম্বাণু একই সময়ে নির্গত হয়, তবে ওভ্যুলেশন পিরিয়ডে তার শরীরে মোট দুটি ডিম্বাণু থাকে। এ সময় মিলন হলে পুরুষের শুক্রাণু উভয় ডিম্বাণুকেই নিষিক্ত করে। একটি নিষিক্ত ডিম্বাণু প্রথমে দুটি পৃথক কোষে বিভক্ত হয়। পরবর্তী সময় প্রতিটি কোষ থেকে একেকটি শিশুর জন্ম হয়। এখানে দুটি কোষ যেহেতু পূর্বে একটি কোষ ছিল, তাই এদের সব জিন একই হয়ে থাকে।
এ কারণে এরা দেখতে অভিন্ন হয় এবং একই লিঙ্গের হয়। এভাবেই নন-আইডেন্টিক্যাল টুইন শিশুর জন্ম হয়। এসব শিশু সবসময় একই লিঙ্গের নাও হতে পারে এবং তারা দেখতে ভিন্নও হতে পারে।
এম.জাফরান হারুন দেশের কন্ঠ 24. কম